মোহনপুর প্রতিনিধিঃ রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি একেই তো মেয়াদোত্তীর্ণ তারপর আবার অছাত্র, ব্যবসায়ী এবং বিবাহিতসহ নানা অভিযোগে পরিপূর্ণ।
এই কমিটি নিয়ে ৫ বছর পর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির আহবান জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোরশেদ আলম।
তাদের এই হটকারী সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড় উঠেছে পুরো উপজেলা জুড়ে। তাদের এহেন কর্মকান্ডে বর্তমান কমিটির নেতারা সহ পদ-প্রতাশীরা নেতারা এবং সাধারণ কর্মীরাও তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কাছে “বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বর্হিঃভূত অবৈধ মেয়াদোত্তীর্ণ, বিবাহিত ও অছাত্রদের দিয়ে ভরা এই কমিটি যততাড়ি সম্ভাব বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
এই কমিটি দীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে না পেরে সম্প্রতি মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই কমিটি পুর্নাঙ্গ করতে পদ-প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করেছে। এতে করে মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের পদ-প্রতাশীরা এমনকি এই কমিটির সদস্যরাও এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে।
২০১৭ সালের কমিটি গঠনের ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হতে জানাযায়, ২০২২ সালের ১৭ তারিখে এই কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৫ বছরপূর্তি হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৯ এর খ ধারা অনুযায়ী উপেজলা শাখার কার্যকাল এক বছর এবং উপেজলা শাখাকে উক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে অর্থাৎ পরবর্তি কমিটির হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে, মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করেই এক বছর মেয়াদী কমিটি নিয়ে প্রায় ৫ বছর ধরে চলছে। এই অবস্থায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
অছাত্র ও বিবাহিত সদস্যে পরিপূর্ণ মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগ! মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া দীর্ঘ ৫ বছর পার হওয়ার ফলে কমিটির আট জনার মধ্যে ৭ জনের বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। অন্যদিকে বর্তমান কমিটির সভাপতিসহ মোট ৫ জনই বিবাহিত এবং অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে ব্যাবসা ও চাকরি করছেন।
বর্তমান কমিটির অভিযুক্তদের বর্ণনা: উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে অছাত্র, তিনি বিবাহিত এবং ব্যবসা করেন, সহ-সভাপতি মো. শামীম আহমেদ বিবাহিত এবং বর্তমানে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক, আরেক সহ-সভাপতি আবুল বাশারের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই।
সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলমও বর্তমানে অছাত্র, কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রমি তিনি বর্তমানে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সহ-সভাপতি, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন শেখ তিনিও বিবাহিত এবং অছাত্র, কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল তিনি বর্তমানে পড়াশুনা শেষ করে বিবাহ সম্পন্ন করার পাশাপাশি চাকরি করছেন, আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব ইসলাম দূর্জয় তিনিও বর্তমানে বিবাহিত।
এমন পরিস্থিতিতে বিতর্কিত এবং অবৈধ কমিটির দাপট এবং নতুন কমিটি না হওয়ায় এবং এই কমিটি পূর্নাঙ্গ করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ কর্মীদের দলীয় বিভক্তি ও অন্তকোন্দল বেড়েই চলেছে। ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক কাঠামো। সাপ্তাহিক মিছিল-মিটিং ও জাতীয় কার্যক্রমের বাহিরে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এই ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নেই বললেই চলে। ফলে অনেক দিন ধরে সংগঠনের সঙ্গে থেকে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করতে না পেরে হতাশা নিয়ে রাজনীতি ছাড়ছেন সক্রীয় নেতাকর্মীরা।
এই বিষয়ে বর্তমান কমিটির ১নং সহ-সভাপতি এবং মোহনপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে তারা (রাজ্জাক-মুরশেদ) ব্যর্থ। তাঁদের কোনো সফলতার গল্প নেই। আর তাছাড়া আমাদের কমিটির সভাপতি সহ মোট আমরা ৫ জন বিবাহিত এবং আমাদের ৬ জনের বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। আমরা পড়াশুনা শেষ করেছি। এমন পরিস্থিতিতে আমি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি যতদ্রুত সম্ভব এই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হোক।
বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব ইসলাম দূর্জয় বলেন, আমাদের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে চার বছর আগেই। তাছাড়া আমাদের আট সদস্যের মধ্যে সভাপতিসহ আমরা ৫ জনই বর্তমানে বিবাহিত এবং বর্তমানে আমাদের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রমি ও আমি বাদে করোই ছাত্রত্ব নেই। এমন পরিস্থিতিতে কোন ভাবেই এই কমিটি পুর্নাঙ্গ করা উচিত নয়। আমি এমন সিদ্ধান্তের তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগকে বেগবান করার লক্ষে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কাছে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম কমিটির মেরাদোত্তীর্ণ এবং কমিটির সদস্যদের বিবাহের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত বছর গুলোতে করোনা মহামারীর কারনে আমরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সাথে কমিটির বিষয়ে বসতে পারিনি তাই কমিটি সম্পন্ন করতে পারিনি। তবে স্থানীয় এমপি মো. আয়ান উদ্দিন এবং জেলা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সাথে বেশ কিছুদিন আগে এই কমিটির বিষয়ে কথা হয়েছিল সেই জের ধরেই আমরা এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।
রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির আহম্মেদ অমি বলেন, মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে এই কমিটি অবৈধ আখ্যায়িত করে বলেন, এদের অনেকেই ইতোমধ্যে বিয়ে করেছেন এবং অনেকেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই।
শুধু তাইনা তারা এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন তাদের একক সিদ্ধান্তে এ বিষয়ে তারা আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেন নি তবে আমি শুনেছি তারা আমার সভাপতির সাথে নাকি যোগাযোগ করেছে তবে আমার এখনো এই বিষয়ে সভাপতির সাথে কথা হয় নি। আমি আপনাদের শুধু এইটুকু বলতে পারি এই অবৈধ কমিটিকে আমি কখনো অনুমোদন দিবো না।
তিনি আরো বলেন, আমি কিছুদিন আগেই আমার নেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক লেখক ভট্টাচার্য দাদার সাথে কথা বলেছি এই ইউনিটের কমিটি নতুন করে করার ব্যাপারে এবং তার সিগনেচার দিতেও অনুরোধ করেছি তিনি সিগনেচার দিতে সম্মতও হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আমি যতদিন রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি ততদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বর্হিঃভূত কোন কাজ করা হবে না এবং আমি করতেও দিবো না