29 C
Dhaka
Tuesday, June 6, 2023

ঈশ্বরদী আলোচিত দিপা আত্মহত্যা মামলার প্রধান আসামী কে এই হাকিম?

ঈশ্বরদী প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরদীর বহুল আলোচিত আলো জেনারেল হাসপাতালের কর্মী দিপার রহস্য জনক আত্মহত্যার নেপথ্যের ঘটনা এখনো উন্মোচিত হয়নি।

সেই আত্মহত্যা ঘটনার পেছনের ঘটনা অনুসন্ধানে বেরিয়েছে নানা রহস্য। সম্প্রতি আলো জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার এবং নিহত দিপার সহকর্মী মোঃ আব্দুল হাকিমের সম্পৃক্ততাসহ নানা কুকর্মের তথ্য প্রমান মিলেছে।

জানাগেছে, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলাধীন মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমির দিয়ার (বিলপাড়) গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মন্ডলের ছেলে মোঃ আব্দুল হাকিম। ৮ ভাই এবং ২ বোনের মধ্যে হাকিম সবার ছোট। কৃষক পিতার কাধে এতগুলো সন্তানসহ সংসারের চাপটা ছিল তীব্রতর। সংগত কারনেই অভাবের দাবানলে পুড়ে কোন সন্তানকেই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেননি হাকিমের দরিদ্র পিতা। সেই কারনেই মাদ্রাসা বোর্ডের আওতায় দাখিল পার করে থেমে গিয়েছে হাকিমের শিক্ষার্জন। থেমে যাওয়া জীবনে গতি আনতে ভেড়ামারা একটি কাপড়ের দোকানে সাধারণ কর্মীর কাজ নেন হাকিম।
সময়ের ব্যাবধান আর নিজের চাহিদায় বিবাহ সম্পন্ন করেন তিনি। দুই সন্তানসহ পরিবারের বাড়তি চাপে পড়েন হাকিম নিজেও।

তাই দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বাড়তি রোজগারের দিকে মনোনিবেশ করেন হাকিম। তারই এক পর্যায়ে ২০০৫ সালে হাকিমের সঙ্গে পরিচয় হয় ঈশ্বরদীর আলতা ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধীকারী মোঃ শাহিনের সঙ্গে।

জানতে চাইলে মোঃ শাহিন সত্যের সকাল কে জানান, হাকিমের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ২০০৫ সালে। সখ্যতা বাড়ার খাতিরে বেকার হাকিম কে আমার প্রতিষ্ঠানে তাকে নাম মাত্র বেতনে চাকরির সুযোগ দিয়েছিলাম। হাকিম আমার কাছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাকিমের এলাকার এক প্রতিবেশী সত্যের সকাল কে জানান, হাকিমের পরিবার আমাদের এলাকার রিফুজি হিসেবে পরিচিত। নানা প্রকার অনৈতিক কাজের জন্য হাকিমের পরিবারের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই একাধিক সালিশসহ মামলার রেকর্ড আছে। সে সমস্ত মামলার কারাভোগও করেছেন তারা। হাকিমের বাবাকে ধর্ষনের দায়ে জুতার মালা পড়িয়ে এলাকায় ঘোরাতেও বাধ্য হয়েছেন এলাকাবাসী। যদিও এমন অভিযোগ তাদের প্রায় সব ভাইয়ের বিরুদ্ধেই রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

আলতা ক্লিনিকে চাকরি ছেড়ে হাকিম যুক্তহন ঈশ্বরদীর বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ডাঃ শামীমের আলো জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেই হাকিম সহকর্মী হিসেবে পরিচিত হন দিপার সাথে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির বদৌলতে তাদের সম্পর্কের ভিত ক্রমেই শক্ত হতে থাকে। হাকিম-দিপার সম্পর্ক গড়ায় পারিবারিক ভাবে। এভাবে বেশ ভালোই চলছিল তাদের জীবন ব্যবস্থ্যা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাকিমের এলাকার আর একজন সত্যের সকাল কে জানান, হাকিমের এমন পরিবর্তন আগে দেখেনি কেউ। অর্ধাহারে থাকা হাকিম হঠাৎ করেই চারতলা ফাউন্ডেশন করে বিশাল বাড়ীর কাজ শুরু করল। যার একতলা সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। মেয়ের বিয়ের আয়োজনটাও ছিলো বেশ চোখে পড়ার মত! ছেলেকে মাদ্রাসা থেকে ভর্তি করেছেন কলেজে। হাকিমের রাতা রাতি কোটিপতি বনে যাওয়া নিয়ে আমরাও শঙ্কায় ছিলাম। আমরা ভাবতাম হাকিম কি এমন আলাদিনের চ্যারাগ পেল যাতে রাতারাতি সব কিছূ বদলে গেল তার ?

নিহত দিপার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দিপার সকল প্রকার সফর সঙ্গী ছিলেন আব্দুল হাকিম। সেটা হোক প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত! তারই জের ধরে ব্যবসার কথা বলে দিপার মাধ্যমে অন্যদের থেকে টাকা বাগিয়ে নিয়েছে এই হাকিম। হাকিম দিপার থেকে টাকা নিয়েছে এর সত্যতা মিলেছে মৃত্যুর আগে পাওনাদার মোঃ মামুন মন্ডল এবং দিপার একটি ফোনালাপের রেকর্ডিং এ। দিপার পরিবারের কথার সত্যতা যাচাই করতে গেলে হাকিমের আরও নানা অপকর্মের তথ্য আসে এই প্রতিবেদকের হাতে।

তারমধ্যে ঈশ্বরদী তছের পাড়া এলাকায় বসবাস কারী এবং রেলওয়ে জংশনের কুলির সর্দার মোঃ রফিক (ছদ্ম নাম) ইসলামের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে রহিমাকে (ছদ্ম নাম) প্রায় বছর খানিক আগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে অবৈধ শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন হাকিম। অবাধ মেলামেশার এক পর্যায়ে মেয়েটি ৫ মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে জোর পূর্বক মেয়েটিকে গর্ভ পাত করানো হয় এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মেয়ের পরিবারকে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দিপার পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, হাকিম দিপাকে পুজি করে তার মাধ্যমে বিভিন্ন জনের থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে দিপাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ঈশ্বরদী উপজেলার উমিরপুর এলাকায় মামার বাড়ীতে নিজের শয়ন কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঋণের দায়ে আলো জেনারেল হাসপাতালের কর্মী মোছাঃ দিপা খাতুন আত্মহত্যা করেন।

তার আত্মহত্যাটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হত্যা মর্মে দিপার মামা মোঃ মমিন উদ্দিন বাদী হয়ে মোঃ আব্দুল হাকিমকে প্রধান আসামী করে প্রায় ডজন খানেক ব্যাক্তির নামে পাবনা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটির তদন্তভার দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে। আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত এখনো চলমান।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Leave a Reply

লেখক থেকে আরো