সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে হওয়ায় দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় দিনে দিনে সাতক্ষীরায় আমের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ১৫/২০ দিন আগেই বাজারজাত করা যায় সাতক্ষীরার আম । একারণে আমের দামও পাওয়া যায় বেশি । এসব আম স্বাদে, গুণে ও মানে অসাধারণ । একারণে ২০১৪ সাল থেকে সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালি, ইংল্যান্ড, পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে ।
গতবছর মহামারী করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারনে আম রপ্তানি বন্ধ ছিল । এক বছর বন্ধ থাকার পর এবার আবারো দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আম । কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় এবং বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ ও সলিডারিডাড এর সহযোগিতায় চলতি মৌসুমে আবারও রপ্তানি শুরু হয়েছে সাতক্ষীরার আম । আম চাষীরা বিদেশে আম পাঠাতে পেরে বেশ আনন্দিত । এখন ন্যায্য মূল্যে পেলেই তারা খুশি । গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর দ্বিগুন আম বিদেশে রপ্তানি হবে বলে জানা গেছে কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের সূত্রে । সাতক্ষীরার আমের স্বাদ ও মান ভাল হওয়ায় এর চাহিদা বেশি এবং রপ্তানীও বাড়ছে ।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও এফএও এর যৌথ কারিগরী সহায়তায় শনিবার সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের পুটুনি এলাকার চাষী দাউদ মোল্লার বাগানের গোবিন্দভোগ আম পেড়ে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে চলতি মৌসুমে বিদেশে আম রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় । এদিন প্রথম চালানে আধাটন গোবিন্দভোগ আম জার্মানিতে পাঠানো হয় । সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম, উত্তরণে’র সফল প্রকল্পের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন, উত্তরণের সাপ্লাই চেইন অফিসার শহিদুল ইসলাম সলিডারিডাড’র সাপ্লাই চেইন প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ ।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বিদেশে আম রপ্তানির জন্য মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে জৈব পদ্ধতিতে বাগান পরিচর্যা শুরু করেন চাষীরা । ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা থেকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত গোবিন্দভোগ আম হার্ভেস্টিং ও রপ্তানি শুরু হয়েছে ।
সচরাচার হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম রপ্তানি হলেও এবারই প্রথম বারের মতো রপ্তানির তালিকায় উঠলো সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম । দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সাতক্ষীরায় দিনে দিনে আমের চাষ বাড়ছে । এছাড়াও আমের গুনগত মান বজায় রাখতে সদা তৎপর ছিলেন সাতক্ষীরার আম চাষিরা এবং তাদের সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ।
সলিডারিডাড এর সাপ্লাই চেইন প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এবছর পুরো জেলা জুড়ে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, তালা ও দেবহাটা উপজেলার ৫০০ শত জন চাষিকে আম রপ্তানির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সলিডারিডাড । নিরাপদ বিষমুক্ত আম বিদেশে পাঠাতেই তাদের এই প্রচেষ্টা । তিনি আরো জানান, এবছরই প্রথম গোবিন্দভোগ আম বিদেশে যাচ্ছে । বিদেশে আমের বাজারকে সুসংহত করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম জানান, এবার ৫০০ শত মেট্রিক টন আম বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । তিনি আরো বলেন, জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ১০০ শত জন চাষী ৫ হাজারেরও বেশি বাগানে আম চাষ করেছেন । আর ৫০০ শত হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম । উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ।
অন্যান্য জেলার তুলনায় ১৫-২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পেকে যায় । একারণে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রপ্তানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম । এ বছর থেকে এই তালিকায় গোবিন্দভোগ আম যুক্ত হলো । এছাড়া সারাদেশেও রয়েছে সাতক্ষীরার আমের বিপুল চাহিদা ।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানি শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে । করোনা ভাইরাসের কারণে গতবছর রপ্তানি বন্ধ থাকার পর এবছর আবার রপ্তানি শুরু হয়েছে।
দৈনিক সত্যের সকাল / আজমীর হোসাইন (সাতক্ষীরা)