ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ -এই প্রবাদ জেনে বেড়ে উঠেছি আজাপড়া গায়ে৷ ছোটবেলায় যখন অন্য ছেলে মেয়েরা ঈদ পোশাক নিয়ে মারামারি করতো কে কোনটা নিবে তাই নিয়ে। তখন আমরা ভাবতাম ঈদের দিন নতুন পোশাক না পাই সেমাই মিস্টি পেলেই খুশি। আরো একটা ভয়ে থাকতাম ঈদের দিন বাবা-মা যেন ঝগড়া না করে। তখন তো আর বুঝতাম না ঝগড়া কেন করতেন। এখন তো জানি অভাবে মানুষের সভাব ও নষ্ট হয়ে যায়।
এখন বড় হয়ে গেছি ওসব আর মাথায় চিড় ধরে না। এখন চিড় ধরে মা-বাবাকে কিছু দিতে পেরেছি কি না তা নিয়ে। চিড় ধরে আমার আশেপাশে পিচ্চি বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া ছোট ভাইগুলোর জন্য। তারাও কি নতুন পোশাক পরার স্বপ্ন দেখে? ঈদের দিন ধনী বাবার সুপুত্রের পোশাকে নোংরা হাত লাগিয়ে দেওয়ার জন্য ঝাড়ি শুনে? দূর থেকে দেখেই কি তৃপ্তি মিটায়?
এইতো সেদিন প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখলাম, চাউল কিনার জন্য দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে কয়েক আটি শাক বিক্রি করতে শহরে এসেছেন এক শিশু। স্কুলে না খেয়ে যাওয়া লাগে চাউল না থাকার কারণে। সে বুঝে গেছে তার ভাতের ব্যবস্থা তাকে করতে হবে। প্রকৃতি তার ভাতের অভাব দেখবে না। যে বয়সে তার হেসে খেলে স্কুল মাঠে ছুটোছুটি করে কাটানোর কথা ছিলো সেই বয়সে সে নিজের অভিভাবক। মায়ের দায়িত্বশীল একজন।
রাস্তায় কোন বাচ্চা যদি আমার কাছে কোন সাহায্য চায় আমি তৎক্ষনাৎ তার কাছে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে ফেলি। কিছু শিশু একারণে আমার উপর বিরক্ত ও হন। কিন্তু আমার কেন জানি তাদের সাথে মিশেযেতে ভালো লাগে। খোজ খবর নিতে ভালো লাগে।
সামনে ঈদ, শপিংমল গুলোতে পাবেন মানুষের উপচে পড়া ভীড়। কিন্তু অপর দিকে দুইবেলা খেয়ে রোযা রাখার সামর্থ রাখছে না আমার কিছু ভাই বন্ধু কাকা দাদারা। আমার বাংলাদেশ আমার পৃথিবী তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না।
যারা তিনবেলা খাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে অভ্যস্ত তাদের আপনি আরো কিছু দিয়ে কাছে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। কিন্তু আপনার দেওয়া সেই কিছুর কিছু অংশ আমার ওই দায়িত্ব কাধে নেওয়া অনাথ ভাইটাকে দিন। সে তৎক্ষনাৎ আপনাকে কিছু দিতে পারবে না। দেখবেন ভ্যাবলা হয়ে আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কোন কিছু বলার মতো ভাষা তার তখন থাকবে না। আপনি কাধে হাত দিয়ে কিছু একটা সম্মোধন করুন সে চোখের পানি ফেলবে এটা সম্মানের পানি সে আপনাকে মনের ছোট্ট একটা কুঠিরে যায়গা দিয়ে দিবে।
ঈদ এসে গেছে আমাদের আশেপাশে এমন অনেক কেই পাবেন। চলুননা আমরা একসাথে ঈদ টাকে ঈদ বানাই। মিশে যাই আবেগের সাথে। মুছে ফেলি বিভেদ।
রুহুল আমিন।
শিক্ষার্থী
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
(বিঃ দ্রঃ সত্যের সকালের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, সত্যের সকাল কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার সত্যের সকাল নিবে না)