অপরূপ স্থাপত্যশৈলীর রাজবাড়ী আর দৃষ্টিনন্দন সংগ্রহশালা নিয়ে দর্শনার্থীদের মুগ্ধতায় আসীন নাটোরের উত্তরা গণভবনে এখন যুক্ত হয়েছে হাজারও পাখির কুঞ্জন। করোনাকালে দর্শনার্থীদের পরিদর্শন বন্ধ থাকায় লোকচক্ষুর আড়ালে বেড়েছে পাখির আবাস। পুরো গণভবন যেন পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
এরইমাঝে সেখানে দেখা মিলেছে পৃথিবী থেকে বিলুপ্তপ্রায় সাপপাখি বা গয়ার। পুরো গণভবনেই দেখা মিলছে সাদা-কালো হাঁড়িচাচা পাখির রাজত্ব। সেখানকার হ্রদে চলে অজস্র ছোট পানকৌড়ির খাবার অন্বেষণ। এ ছাড়া অন্যান্য পাখির মধ্যে দেখা গেছে তিন প্রজাতির কাঠঠোকরা, বড় কুবো, ফিস ঈগল, তিশা বাজ, পাঁতি সরালি, ময়না, ঘুঘু, ডাহুক, কয়েক প্রজাতির মাছরাঙা, বুলবুল আর দেশি টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সন্ধ্যায় দেখা মেলে খুড়লে পেঁচার। আর এসব পাখির বিচরণে স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ থাকে জায়গাটি।
গণভবনে বাসকারী পাখিদের সুরক্ষা দিতে এবং পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জুন পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার উত্তরা গণভবনে পাখি অভয়াশ্রম উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধন করা এই অভয়াশ্রমে পাখিদের উপযোগী অসংখ্য গাছ রোপণ করা হয় এবং তৈরি করা হয় পাখির আবাস।
অরিয়েন্টাল ডার্টার বা সাপপাখি বা গয়ার প্রজাতির পাখিটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় এই পাখির সংখ্যা মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার। উপমহাদেশের ভারতসহ কয়েকটি দেশে এর দেখা মেলে। সম্প্রতি এই পাখির দেখা মিলেছে নাটোরের উত্তরা গণভবনে। মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়ানো পর্যটক এই পাখির যাতায়াতের বিরতিস্থল হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবন।
উত্তরা গণভবনে পাখিদের অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার মুর্তজা সারওয়ার। পাখিপ্রেমিক সারওয়ার জানান, ২০২০ সালের মে মাস থেকে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বার্ডিং করেন উত্তরা গণভবনে। রাজপ্রাসাদবেষ্টিত দীঘির চারপাশের পুরনো আমবাগানে গাছের ডালে ডালে উড়ে বেড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। করোনাকালীন লকডাউনে উত্তরা গণভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় পাখিদের বিচরণ হয়েছে নির্বিঘ্ন। গণভবনে ৪৩ রকমের পাখি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তার।
সারা দেশে যুগান্তরের পাঠক ফোরাম স্বজন সমাবেশ গঠনের পর শুরুতেই নাটোর জেলা শাখার বেশ কিছু ব্যতিক্রমী কর্মসূচি নন্দিত হয়। এর মধ্যে পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘পাখি হত্যা রোধ করতেই হবে’ শিরোনামে নাটোরে জনমত গঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নাটোর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন জানান, গণভবনে পাখিদের অবাধ বিচরণ, অভয়াশ্রম তৈরি এসব দেখেশুনে পাখিপ্রেমীদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে। পাখিদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণভবনের আমগাছগুলো ফলের মৌসুমে ইজারা না দেওয়া হলে পাখিদের খাদ্য নিশ্চিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বাসভবনে আমগাছ ইজারা না দিয়ে পাখির খাবার হিসেবে রেখে দেওয়া হলে পাখিরা উপকৃত হবে এবং সংখ্যায় বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।