ঈশ্বরদী প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরদীতে চাঞ্চল্যকর দিপা আত্মহত্যার ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাবনা আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) মৃত দিপার মামা মোঃ মোমিন উদ্দিন প্রামানিক (৫০) বাদী হয়ে পাবনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী ০২ নং) আদালতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে প্রায় ডজন খানেক আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি)-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আসামীদের নাম এই মুহুর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
মামলার এজহারে বলা হয়, আসামীরা হাসপাতাল-ব্যবসার পাশাপাশি হাসপাতাল কর্মচারী দিপা খাতুনকে ব্যবহার করে অর্থ লগ্নী কারবার জড়িত ছিলেন। এক পর্যায়ে দিপা খাতুন আসামীগণের উক্ত অনৈতিক কার্যকলাপ অব্যাহত রাখতে অস্বীকার করেন।
পরে আসামীরা তাকে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর ২০২১ বিকাল আনুমানিক ৪ টার দিকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে পাশের গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এনআরবিসি ব্যাংকের ২টি সাক্ষরিত সাদা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং তাদের কথামত না চললে তাকে জীবনের মত শেষ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। পরে দিপাকে সেখান থেকে তার বাড়ির কাছাকাছি ছেড়ে দেন।
এজহারে দিপা খাতুনকে নিয়ে আলো জেনারেল হাসপাতালের মালিক ও উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ শামীমের গত ২৪ জানুয়ারি ২০২২ এর নিজ ফেইসবুক পোস্টের তথ্যও সন্নিবেশিত রয়েছে।
এজহারে আরও উল্লেখ আছে যে, আসামীগণ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাতে দিপার বাড়িতে গিয়ে দিপা ও তার পরিবারের সদস্যদের গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি দেয় এবং দিপার ২টি স্মার্টফোন সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এঘটনার পর আসামীরা দিপার পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও সমাজের লোকজনের নিকট একের পর এক নানাধরনের কুৎসা রটনা করে দিপাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। শেষ পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে দিপা অমানুষিক নির্যাতন বিদ্রুপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
অপরদিকে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদকে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগকৃত মামলাটি না নেওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, আত্মহত্যার জন্য থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আমরা তা তদন্ত করে দেখছি। কিন্তু পরিবার আত্মহত্যায় প্ররোচনার কোন আলামত পেশ করতে পারেনি এবং আমাদের তদন্তেও এমন কিছু এখনও পাইনি। তবে এখানে অর্থ সংক্রান্ত একটি জটিলতা আছে, সে বিষয়ে তদন্ত করছি এবং আমরা প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছি। বাংলাদেশ পুলিশের রেকর্ডে এমন অনেক অপমৃত্যু মামলা রয়েছে যেগুলো পরে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা করছি। রহস্য উদঘাটন হলেই বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারী আলো জেনারেল হাসপাতালের কর্মী মোছাঃ দিপা খাতুন (২৬) নামের এক যুবতী প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দেনা থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যা করেন বলে এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সুত্রঃ স্বতকন্ঠ