মোঃ নাহিদ হাসান রাজা, চারঘাট উপজেলা প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের চাষ করছেন মেহেদী হাসান। নিজ অর্থায়নে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হয়েছেন একজন সফল মৎস্যচাষি।
মেহেদী হাসান উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের বাদুড়িয়া গ্রামের বাদলের মোড় এলাকার ফজলুর রহমান এর দ্বিতীয় সন্তান। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে স্নাতকোত্তর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিসারিজ এর উপর মার্স্টাস করেন।
ছাত্র জীবনে মেধাবী মেহেদী হাসান চাকুরি পেছনে না ছুটে ২০১৬ সালে গড়ে তুলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। স্থানীয় কৃষকদের পরমর্শ ও কৃষিকাজে আর্থিক সহযোগিতা ছিল তার সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।
এরপর তিনি ২০১৯ সালে ফিশারিজ বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে নিজ বাড়িতে ৫ শত বর্গফুট জায়গায় শুরু করেন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ। দেড় বছর সফলতার সাথে পাইলট প্রকল্প শেষে প্রায় ৫০ শতক জমির উপর আনুমানিক ৪ হাজার বর্গফুট জায়গায় গড়ে তুলেন মাছের খামার এবং নাম দেন অর্গানিক ফিস ফার্ম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিজ অর্থায়নে ২০২০ সালের জুন মাসে এই অর্গানিক ফিস ফার্ম এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কাজ শেষে গত মার্চ মাস থেকে তিনি উৎপাদন শুরু করেন।
ফার্মে দুইটি ট্যাংক রয়েছে যার আয়তন ৪ হাজার বর্গফুট এবং ৪ লক্ষ লিটার পানি ধারন ক্ষমতা। পোনা ছাড়ার দিন থেকে প্রায় ১২০ দিনে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮ হাজার কেজি মাছ। মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন নিজের উৎপাদিত গমের আটা, গমের ভুষি এবং অর্গানিক ফিড।
পোনা সংগ্রহ করছেন নওগাঁ ও বগুড়ার বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে। ভবিষ্যতে পোনা উৎপাদনের জন্য নিজস্ব হ্যাচারি তৈরির পরিকল্পনা আছে বলেও জানান।
মাছের খামারের মালিক মেহেদী হাসান প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষা জীবন শেষে বেকারত্ব ঘুচাতে সকলে চাকুরির পিছনে ছুটে। তবে আমার ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিল নিজ গ্রামে কিছু করা। উদ্দেশ্য ছিল নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি গ্রামের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এই অদম্য ইচ্ছা নিয়ে আমি ২০২০ সালে অর্গানিক ফিস ফার্ম নামে মাছ চাষের খামার শুরু করি।
গত মার্চ মাস থেকে আমার খামারে মাছ উৎপাদন শুরু করেছি। ২টি ট্যাংকে প্রায় ৪ হাজার স্কয়ারফিট জায়গায় দুই প্রজাতির ১ লক্ষ ২০ হাজার পিস মাছ ছাড়া হয়েছে। দুই প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম কৈ ও মনোসেক্্র তেলাপিয়া। ইতিমধ্যে ২২ হাজার পিস কৈ মাছ বিক্রয় করেছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গিয়ে প্রতি কেজি কৈ উৎপাদন খরচ প্রায় ৭৫-৮০ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা। তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন খরচ ৭০-৭৫ টাকা এবং বিক্রয় মুল্য ১৪০-১৫০ টাকা।
নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়তার পাশাপাশি পুকুর খননের হাত থেকে উপজেলার কৃষি জমিগুলো রক্ষা করতে এমন উদ্যোগগুলো অধিক কার্যকরি বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার ওয়ালিউল্লাহ মোল্লা জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ আমাদের দেশে নতুন এবং এখনও রিসার্স পর্যায়ে রয়েছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে এগিয়ে আসছে। প্রযুক্তি নির্ভর এই মাছ চাষ পদ্ধতিতে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবিদের নিয়ে সংগঠন তৈরি ও আড়তে সনাতন পদ্ধতিতে মাছের ওজন পরিবর্তন করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাছের ওজন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে যেন মৎস্যচাষিরা এর সুফল ভোগ করতে পারেন।