১৯৭৩ সালেই বঙ্গবন্ধু নিজের আত্মজীবনী প্রকাশের ইচ্ছে ব্যক্ত করে আবদুল গাফফার চৌধুরীকে তার ডিকটেশন নেয়ার কথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর তাগাদা দেখে তিনি বলেছিলেন,
“আপনার গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মধ্যে আপনি কি সময় বের করতে পারবেন?
শেখ সাহেব বলেন : আমাকে সময় করতেই হবে। নইলে আর সময় পাব না। ওরা আমাকে সময় দেবে না। কেবল সুযোগ খুঁজছে, কখন হত্যা করবে।
এই প্রথম তার মুখে একটা চক্রান্তের ইংগিত পেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম : আপনি কি সত্যি সত্যি ভাবছেন, কেউ আপনাকে হত্যা করতে চায়?
মুজিব বললেন : তুমি সাংবাদিক, তোমাকে একথা মুখ ফুটে বলতে হবে কেন? তুমি কি বুঝতে পার না, কারা আমাকে হত্যা করতে চায়? এবং কেন চায়?”
<গ্রন্থসূত্র : ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরোই আগস্ট পঁচাত্তর (আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী)>
১৯৭৫ সালের ২৩ জুলাই স্ত্রীর চিকিৎসার্থে লন্ডন যাওয়ার আগে আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন,
“যদি তাড়াতাড়ি না আসো, তাহলে আত্মজীবনী লেখার কাজে আর আমাকে সাহায্য করতে পারবে না। তুমি যতদূর পর্যন্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করে গেছ, ঠিক ততদূরই কাজ এগিয়েছে। তারপর আর কাজ হয় নি। এখন তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করতে চাই। …. সময় পাব না। তোমাকে বলছি, যেকোন মুহুর্তে আমাকে হত্যা করা হতে পারে। দেশে একদিন তুমি ঠিকই ফিরবে, কিন্তু ফেরার আগেই হয়তো শুনবে তোমার মুজিব ভাই আর নেই। একটা বুলেট আমাকে চেজ করে ফিরছে। কখন বুকে বিঁধবে আমি নিজেও জানি না।”
বঙ্গবন্ধুর আশংকাই সত্যি হয়েছিল! এই আলাপের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে খুনি ফারুক-রশীদ-ডালিম চক্র বঙ্গবন্ধুকে, তার পরিবার সহ নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৫ আগস্ট – ইতিহাসের কলঙ্কিত একটি দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরও প্রাণ হারান তাঁর সহধর্মিণী, তিন ছেলেসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে। তবে এখনো কয়েকজন খুনি বিদেশে পলাতক রয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা করছে সরকার।
লেখক
জোবায়ের আনসারী, নোবিপ্রবি।