ঈশ্বরদী প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরদীতে আলো জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী দিপার আত্মহত্যার খবর নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে পুরো ঈশ্বরদী উপজেলা জুরে। সেই সাথে দিপার মৃত্যুর পেছনের নানা কারনগুলো জন সম্মুখে আসতে থাকায় জনমনে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, গত প্রায় ১০/১২ বছর ধরে আলো ডায়াগনস্টিক ও জেনারেল হাসপাতালে কাজ করছেন দিপা। কাজের সূত্রতায় বেশ ভালো সক্ষতা গড়ে ওঠে আলো জেনারেল হাসপাতালের স্বত্বাধীকারী ডা. শামীম ও তার স্ত্রী ডানার সাথে। তাদের সক্ষতায় একে অপরের বাড়িতে যাতায়াতও ছিলো অবাধ। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছিলো তাদের দিনকাল।
তারই মধ্যে গত ২৪ জানুয়ারী ২০২২ ইং তারিখে ডা. শামীম তার ফেইসবুক আইডিতে দিপাকে আলো জেনারেল হাসপাতাল থেকে চাকরি চ্যুতির একটি স্ট্যাটাস পোষ্ট করেন।
সেখানে দিপার ছবিতে একটি লাল কালির ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করেন তিনি। এবং তিনি লেখেন আজ থেকে আলো জেনারেল হাসপাতালের সহিত দিপার সকল সম্পর্ক ছিন্ন বিধায় তার সাথে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনে তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান দায়ী থাকবে না মর্মে জনগনকে সতর্ক বার্তা দিয়ে সেটা ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে শেয়ার করেন ডা.শামীম।
তারপর থেকেই দিপাকে নিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টিহয় বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান,চাকরি হারাবার পর থেকে দিপার কাছে টাকা পাবে বলে একাধিক ব্যক্তি বাড়িতে আসতে শুরু করে।
বাড়ীতে আসা পাওনাদার এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি যে দিপা নাকি তাদের থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা অনলাইন ব্যবসা করার কথা বলে ধার নিয়েছে। যে ধারের টাকার জন্য লাখে প্রতিদিন ২ হাজার করে সুদ বাবদ পরিশোধও নাকি করেছে দিপা,যেটার আমরা কিছুই কোনদিন জানতে পারিনাই বা জানি না।
দিপার মামাসহ প্রতিবেশীরা জানান দু-একজন পাওনাদার এসে বলেছে তাদের থেকে ডা.শামীমের প্রয়োজন বলেও টাকা নিয়েছে দিপা।
দিপার মামা মো.মমিন উদ্দিন প্রাং জানান,পাওনা টাকার জের ধরে ভেলুপাড়া এলাকার আবু বক্কর মন্ডলের পুত্র মো.মামুন মন্ডলসহ তার গং একাধিকবার দিপাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেছে। সেসময় তারা জোর করে দিপাকে দিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও করে নিয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
মমিনের স্ত্রী ও দিপার মামি জানান,মামুনগং দিপাকে তুলে নিয়ে শিলা নামের একজনকে দিয়ে বেধরক মারধর করিয়েছিলেন। যার কালচে দাগ মিলেছে দিপার সমস্ত শরীর জুরে।
তারই ধারাবাহিকতায়,মৃত্যুর আগের দিন রাত আনুমানিক ৮.৩০ ঘটিকার দিকে মামুন দুইটি মোটরসাইকেল যোগে তার সাঙ্গপাঙ্গসহ দিপার মামার বাড়ীতে যায় এবং পরের দিন সকালের মধ্যে টাকা না দিলে গুলি করে হত্যা করার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চলে আসেন।
অতঃপর রাত পোহালেই দিপার ঝুলন্ত দেহ তার শয়ন কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। উদ্ধারের পর তাকে ঈশ্বরদী সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দিপাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ মৃতদেহটি পুলিশ হেফাজতে নেন এবং ময়না তদন্তের জন্য পাবনা মর্গে পাঠান।
দিপার মামার দায়ের করা মামলা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিউটি অফিসার এস আই রবিউল ইসলাম বলেন,ময়না তদন্ত শেষে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ময়না তদন্ত শেষে দিপার দাফনের ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে দিপার পরিবারের দায়েরকৃত মামলাটি এখনো নেয়নি পুলিশ।
দিপার এই রহস্যজনক মৃত্যুতে এলাকার মানুষের মাঝে এক ধুম্রজাল তৈরী হয়েছে!