ফাইভ স্টার’ শব্দটি শুনলে আপনার কিসের কথা মনে পড়ে? উত্তরেই অনেকেই চকলেট, হোটেল, রেস্টুরেন্টের কথা বলবেন। আসলে এখানে এসব কিছু নিয়ে কথা হচ্ছে না। এখানে বলা হচ্ছে পাকিস্তানের পাঁচ ম্যাচের পাঁচ ম্যাচসেরা খেলোয়াড়দের কথা।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পাঁচ তারকার কৃতিত্ব
১। শাহিন শাহ আফ্রিদি (৪–০–৩১–৩) বনাম ভারত;
২৪ অক্টোবর, ২০২১; ভেন্যু: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত
ওয়ানডেতে ৭ বার, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫ বার- বিশ্বকাপ ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে ১২ ম্যাচের ১২টাতেই পরাজিত দলটি ছিল পাকিস্তান। এবারে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল পাশার দান উল্টে দেওয়া।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাবর আজম। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথাযথ মর্যাদা দিতে খুব একটা দেরি করেননি শাহিন শাহ আফ্রিদি। দুর্দান্ত ইয়র্কারে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে রোহিত শর্মাকে গোল্ডেন ডাক খাওয়ান শাহিন।
রোহিতের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই তৃতীয় ওভারে আবার শাহিনের ক্যারিশমা। ওভারের প্রথম বলে গুড লেংথে পিচ করিয়ে আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করেন তিনি। সবচেয়ে বড় চমক শাহিন জমিয়ে রেখেছিলেন নিজের শেষ ওভারের জন্য।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘চীনের মহাপ্রাচীর’ বনে যাওয়া বিরাট কোহলিকে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের তালুবন্দী করে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন পাকিস্তানি বাঁ-হাতি পেসার।
২। হারিস রউফ (৪–০–২২–৪) বনাম নিউজিল্যান্ড
২৬ অক্টোবর, ২০২১; ভেন্যু: শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত
সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ড দল পাকিস্তান সফর বাতিল করলে শোয়েব আখতার তখন বলেছিলেন, ‘নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান ক্রিকেটকে ‘হত্যা’ করেছে।’ শোয়েবের সেদিনের কথা হারিস রউফের মাথায় যেন ভালোমতো গেঁথে গিয়েছিল।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যান্ডেটরি পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন হারিস। নিজের দ্বিতীয় বলেই ১৪৮ কিলোমিটারের ইয়র্কারে মার্টিন গাপটিলকে বোল্ড করেন হারিস।
ব্ল্যাক ক্যাপসদের ওপর এদিন ভালোমতোই চেপে বসেছিলেন হারিস। নিজের দ্বিতীয় ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও মাত্র পাঁচ রান দেন। ১৮তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার বোলিং করতে এসে জোড়া ধাক্কা দেন হারিস।
ওভারের প্রথম বলে ডেভন কনওয়েকে কাউ কর্নারে অধিবায়ক বাবরের ক্যাচ বানান রউফ। ওই ওভারের তৃতীয় বলে গ্লেন ফিলিপসকে ডিপ মিড উইকেটে হাসান আলির ক্যাচে পরিণত করেন হারিস।
আর নিজের ও ইনিংসের শেষ বলে দুর্দান্ত স্লোয়ারে মিচেল স্যান্টনারকে বোল্ড করে চতুর্থ উইকেট শিকার করেন পাকিস্তানি পেসার। আগুনে বোলিং ও একেকটা উইকেট নিয়ে উদযাপন করে হারিস যেন শোয়েবের সেদিনের কথারই প্রতিদান দিচ্ছিলেন।
৩। আসিফ আলি (৭ বলে ২৫*) বনাম আফগানিস্তান
২৯ অক্টোবর,২০২১ভেন্যু: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত
দুবাই, শারজাহ ঘুরে আবার দুবাই। এবার পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ আরেক প্রতিবেশী আফগানিস্তান।
১৩ বলে ২৪ রান দরকার- এমন পজিশনে শাদাব খান সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন। তবে ‘বিচক্ষণ’ আসিফ আলি সিঙ্গেল না নিয়ে শাদাবকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।
১৯ তম ওভার বোলিং করতে আসেন আফগান পেসার করিম জানাত। প্রথম বলে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে ‘আভাস’ দিয়েছিলেন আসিফ। দ্বিতীয় বলে ডট। তৃতীয় বলে আবারও ছক্কা, যেটা উড়ে গেল ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। ৬, ০, ৬, ০ – করিমের কাছে আসিফ যেন বনে গিয়েছিলেন ‘অঙ্কের শিক্ষক’।
তবে আর ‘শিক্ষকতা’ করার মতো ধৈর্য ধরলেন না আসিফ। আফগান পেসারকে পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে স্ট্রেইট হিট ও ডিপ কাভার দিয়ে টানা দুটো ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে এক ওভার আগে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান আসিফ।
৪। মোহাম্মদ রিজওয়ান (৫০ বলে ৭৯*) বনাম নামিবিয়া
২ নভেম্বর, ২০২১; ভেন্যু: শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত
ভারতের বিপক্ষে ৫৫ বলে ৭৯ রানের ফিনিশিং নক খেলেও ম্যাচের আলো কেড়ে নিতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। এবার আরও ৫ বল কম খেলে একই রান করেন পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
আবুধাবিতে এদিন রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল অত্যন্ত ধীরস্থির। এমনকি ১২ বলে ২ রান করে জেজে স্মিটের বলে এলবিডব্লু হয়ে রিজওয়ান ফিরে যেতেন যদি না রিভিউ নিতেন।
‘জীবন’ পাওয়ার পরের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে নিজের অস্তিত্বের জানান দেন রিজওয়ান। এরপর খোলস থেকে বেরিয়ে একের পর এক চার-ছক্কা মেরে নামিবিয়ান বোলারদের ছাতু বানাতে থাকেন।
আর শেষ ওভারে চারটি চার ও এক ছক্কা মেরে স্মিটকে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দেন রিজওয়ান। ৫০ বলে ৭৯* রানের ইনিংস খেলার পথে পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক ব্যাটার আটটি চার ও চারটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।
৫। শোয়েব মালিক (১৮ বলে ৫৪*) বনাম স্কটল্যান্ড
৭ নভেম্বর,২০২১; ভেন্যু: শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত
‘চারে চার’ করে সেমিফাইনালের টিকিট কেটে ফেলা পাকিস্তানের কাছে এই ম্যাচটি ছিল কেবলই নিয়মরক্ষার। তবে শারজার দর্শকরা এই ম্যাচে দেখেছিলেন ‘বুড়ো হাড়ের ভেল্কি।’
শোয়েব মালিক যখন ব্যাটিংয়ে এলেন,তখন পাকিস্তানের স্কোর ১৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১১২। নিজের প্রথম তিন বলে চার রান নিয়েছিলেন মালিক। এরপর ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে মার্ক ওয়াটকে ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কা মেরে মালিক ‘আগাম ঝড়ের’ পূর্বাভাস দেন।
একের পর এক ছক্কায় স্কটিশ বোলাররা হতে থাকেন দিশেহারা। আর ‘সাইক্লোন’টা চালান ক্রিস গ্রিভসের ওপর ইনিংসের শেষ ওভারে তিন ছক্কা ও এক চার মেরে। শেষ বলে তুলে নেন এবারের টুর্নামেন্টের যৌথভাবে দ্রুততম ফিফটি (১৮ বলে)। ১৮ বলে ৫৪ রানের ‘টর্নেডো’ চালানোর পথে মালিক মেরেছিলেন ছয়টি ছক্কা ও একটি মাত্র চার।