28 C
Dhaka
Sunday, March 26, 2023

পাবনার শিশু গৃহকর্মীর উপর অমানুষিক অত্যাচার!

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নয় বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মীর কাজ পছন্দ না হলেই সারা শরীরে দেয়া হতো গরম খুন্তির ছ্যাকা। কান্নার শব্দ বন্ধ করতে মুখে পুরে দেয়া হতো গামছা। দিনের পর দিন এমন নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে রাজধানী থেকে বাড়ি ফিরেছে পাবনার সাঁথিয়া নিজ বাড়িতে।

সাঁথিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের জান বক্সের মেয়ে জান্নাতুল। সে নির্যাতনের কথা কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলারও হুমকী দিয়েছে নির্যাতনকারী গৃহকর্তী।

ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার জানায়, উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের জান বক্স বছর পাঁচেক আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি ছাড়েন। প্রথম স্ত্রী নুরজাহান খাতুন (৪৫), ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও অভাবের সংসারে যেন দুচোখে অন্ধকার দেখেন নুরজাহান। কাজের সন্ধানে তিনি দুই শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে যান ।

৩ বছর আগে ঢাকা থেকে আবারও গ্রামে ফিরে এসে বাড়ি বাড়ি গৃহকর্মীর কাজ করেন মা নুরজাহান। এতেও সংসারের অভাব দুর না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ৯ বছরের জান্নাতুল খাতুনকে সাঁথিয়ার রায়েক মারী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মিঠুর ঢাকার বাসায় কাজের জন্য পাঠান।

সেখানে গৃহকর্তা মিঠুর স্ত্রী শাপলার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জান্নাতুল। জান্নাতের কাজ পছন্দ না হলেই মারপিট ও গরম খুনতির ছ্যাকা দিতেন শাপলা। চরম নির্যাতন করে গত ২৯ অক্টোবর ৯ মাস পর তাকে ঢাকা থেকে পাবনা পাঠায় বাসে করে। মিঠুর মা মায়া খাতুন জান্নাতুলকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

জান্নাতুলের বাড়িতে সংবাদ কর্মীরা গিয়ে দেখতে পায় তার দুই হাত, পিঠে, মুখে নির্যাতনের চিহ্ন। খুনতির ছ্যাকার দাগ এখনো শরীরিরের সাথে মিশেনি।

জান্নাতুল জানায়, কোন কাজ করতে বা নির্দেশ পালন করতে বিলম্ভ হলেই মিঠুর স্ত্রী শাপলা শুরু করতো অসহনীয় অত্যাচার।কাঁন্নার শব্দ বাইরে না আসে তার জন্য মুখের মধ্যে গামছা পুরে দিত। আমি বাড়ি আসতে চাইলে তারা আরো বেশী মারধোর করতো। মায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে দিত না। বাড়িতে এসে নির্যাতনের কথা কাউকে জানালে আমাকে মেরে ফেলার হুমকীও দিয়েছে তারা।

জান্নাতুলের মা নুরজাহান জানান, মিঠুর মা সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মায়া বেগম ভরণপোষণ ও বিয়ের চুক্তিতে বাসার কাজের জন্য আমার মেয়েকে ঢাকার উত্তরার খিলক্ষেত তার ছেলের বাসায় পাঠান। মিঠুর মা মাসে মাসে ঢাকায় গেলেও অত্যাচারের কথা গোপন রেখেছিল।

আমি আমার মেয়ের “পেটের ভাতের জন্য কাজে পাঠাইছিলাম, অত্যাচারের জন্য নয়”। তিনি মেয়ের প্রতি নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মিঠুর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মিঠুর মা ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মায়া খাতুন জানান, জান্নাতুলকে আমি কাজের জন্য ঢাকা পাঠাই। সেখানে সে সড়ক দূঘর্টনায় আহত হয়েছে বলেই ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় মামলা সেখানেই করতে হবে। আমি জান্নাতুলের পরিবারকে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। শনিবার তারা ঢাকা খিলক্ষেত থানায় মামলার দায়ের করেছেন বলেও শুনেছি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Leave a Reply

লেখক থেকে আরো