23 C
Dhaka
Wednesday, March 22, 2023

পাবনার সুমিত্রা জীবিত থেকেও নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজে তিনি মৃত!

পাবনার বেড়া পৌর এলাকার সুমিত্রা রানীর স্বামী মাস ছয়েক আগে মারা যান। দিনমজুর (কাঠমিস্ত্রী) স্বামীই ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে তিন হাজার টাকা বেতনে আয়া পদে চাকুরি পান সুমিত্রা।

এই টাকাতেই কোনোরকমে চালিয়ে নিচ্ছেন সংসার। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত তথ্যে তাঁকে “মৃত” দেখানোয় চাকুরিটি হারানোর ভয়ে রয়েছেন তিনি।

সুমিত্রা জানান, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকা সত্ত্বেও তিনি টিকা নিতে পারছেন না। অথচ তিনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন সেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীদের করোনার টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্যে তাঁকে মৃত দেখানোয় টিকা গ্রহণের জন্য তিনি নিবন্ধনই করতে পারছেন না। এতে চাকুরি হারানোর ভয়ে কান্নাকাটি করছেন তিনি।

সুমিত্রা রানী বর্তমানে পাবনার বেড়া পৌর এলাকায় বাস করলেও এক সময় তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর খামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ওই সময় ওই স্থান থেকেই তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন হয়। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৮১৯৪১৪৯০০১৩০।

তাঁর স্বামী গোপাল চন্দ্র সূত্রধর দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। উল্লাপাড়ায় কাজ কমে যাওয়ায় গোপাল চন্দ্র স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আট বছর আগে পাবনার বেড়া পৌর এলাকায় চলে আসেন। সেখানে অন্যের জায়গায় ঘর তুলে কোনোরকমে দিন কাটছিল তাঁদের।

মাস ছয়েক আগে সুমিত্রা রানীর স্বামী মারা যাওয়ায় অথৈ সাগরে পরে পরিবারটি। সুমিত্রার পরিবারে রয়েছে অসুস্থ ছেলে, ছেলের বৌ ও দুই নাতি-নাতনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর পরিবারের অসহায় অবস্থা দেখে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্থায়ীভিত্তিতে তাঁকে প্রতিষ্ঠানটিতে আয়া পদে চাকুরি দেয়। সেখান থেকে পাওয়া তিন হাজার টাকা বেতনে কোনোরকমে দিন চলে যাচ্ছে পরিবারটির।

এদিকে আলহেরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনার টিকা গ্রহণ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ চাকুরি করতে পারবেন না। সেই অনুযায়ী সুমিত্রা রানী টিকা গ্রহণের নিবন্ধন করতে স্থানীয় একটি কম্পিউটার সার্ভিসের দোকানে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন ইসির তথ্যভান্ডারে তাঁকে মৃত হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

পরে বেড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়েও বিষয়টি সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হন। এর পর থেকে তিনি বেড়া ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে বার বার ছোটাছুটি করেও ‘মৃত’ থেকে আর জীবিত হয়ে উঠতে পারেননি। এর ফলে তিনি টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধনও করতে পারেননি।

সুমিত্রা রানী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ইশকুলের স্যাররা কইছে, টিকা না নিলি নাকি চাকরি থাকবি না। চাকরি না থাকলি আমরা খাবো কি? এই চিন্ত্যায় প্রতিটা মূহুর্ত যন্ত্রনা পোহাতেছি।’

আলহেরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাকিমুল কবির বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সবাইকে বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। সবাই টিকা নিলেও ইসির ভুলে সুমিত্রা রানী টিকা নিতে পারছেন না। তাঁর বিষয়টি আমরা সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখছি। তবে তাঁর টিকা গ্রহণের সঙ্গে শুধু তাঁরই নয়, এ প্রতিষ্ঠানের সবার নিরাপত্তা জড়িত।’

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্যে সুমিত্রা রানীকে মৃত দেখানো হচ্ছে। সম্ভবত ২০১৯ সালের তথ্য হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারীর ভুলে এ ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘সুমিত্রা রানীকে দ্রুত উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইসি বরাবর ভুল সংশোধনের জন্য একটি আবেদন জমা দিতে হবে। এ আবেদনটি পাওয়া মাত্রই আমরা তা ইসি সচিবালয়ে কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব। আশা করি সেখান থেকে দ্রুতই বিষয়টি সংশোধন হয়ে আসবে। এ ধরনের ভুল এর আগেও আমরা এভাবে সংশোধন করেছি।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Leave a Reply

লেখক থেকে আরো