লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিকের সুবাদে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বলিভিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। দুর্দান্ত জয়ের ম্যাচে অসামান্য এক কীর্তি গড়েছেন রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার মেসি। কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
কনমেবলের দেশে খেলা তারকাদের মধ্যে ৭৭ গোল নিয়ে এতকাল সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ব্রাজিলের পেলে। সে রেকর্ড আজ মেসির হাতে। ৭৯ গোল নিয়ে সবার ওপরে এখন মেসি।
এস্তাদিও মনুমেন্তালে উৎসবে নতুন রং ছড়াতে বেশি সময় নেননি মেসি। ম্যাচের চতুর্দশ মিনিটে দারুণ এক গোলে এগিয়ে নেন দলকে। লেয়ান্দ্রো পারেদেসের পাস ধরে ডিফেন্ডার লুইস হাকিনের বাধা এড়িয়ে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের উঁচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন অধিনায়ক। একটু এগিয়ে থাকা গোলরক্ষক কোনো সুযোগই পাননি।
২৭তম মিনিটে কাছ থেকে জালে বল পাঠিয়েছিলেন লাউতারো মার্তিনেস। কিন্তু অফসাইডে ছিলেন তিনি। ৪০তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মার্তিনেস। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে মেসি বল বাড়ান তাকে; কিন্তু পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে পোস্টের বাইরে মেরে হতাশ করেন ইন্টার মিলানের এই স্ট্রাইকার।
দুই মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো। কিন্তু আনহেল দি মারিয়ার পাস ধরে ১৫ গজ দূর থেকে মেসির নেওয়া শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
বিরতির ঠিক আগে রদ্রিগো দে পলের ভুলে বিপদে পড়তে পারতো আর্জেন্টিনা। নিজেদের ডি-বক্সের মুখে প্রতিপক্ষকে ব্যাকপাস দিয়ে বসেন এই মিডফিল্ডার। তবে উড়িয়ে মেরে সুবর্ণ সুযোগটি নষ্ট করেন বলিভিয়ার মিডফিল্ডার হেনরি ভাকা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরও চাপ বাড়ায় আর্জেন্টিনা। তারই ধারাবাহিকতায় ৬৪তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। মার্তিনেসের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করার ফাঁকে দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শটে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন তিনি। তার প্রথম শটটি প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে ফেরার পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মেসি।
এই গোলেই মেসি ছাড়িয়ে যান লাতিন আমেরিকার আগের রেকর্ড গোলদাতা পেলেকে।
পরের ১০ মিনিটে আরও কয়েকটি সুযোগ আসে; কিন্তু ব্যবধান বাড়াতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ৭৪তম মিনিটে কাছ থেকে আবারও জালে বল পাঠান মেসি, কিন্তু এ যাত্রায় গোল মেলেনি। অফসাইডে ছিলেন তিনি।
৮৮তম মিনিটে অপেক্ষা শেষ হয়, সহজ এক গোলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি। হোয়াকিন কোররেয়ার জোরালো শট ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও বল হাতে রাখতে পারেননি গোলরক্ষক। সঠিক সময়ে গোলমুখে ছুটে যাওয়া মেসি ফিরতি বল অনায়াসে লক্ষ্যে পাঠান।
ম্যাচশেষে আনন্দের আতিশয্যে কেঁদে ফেলেন মেসি। রেকর্ড গড়াটা যে তার স্বপ্ন ছিল, সেটা লুকোননি, ‘আমি আসলেই এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছি। আমি এই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে চেয়েছি। রেকর্ডটা ভাঙার স্বপ্ন দেখেছি। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে রেকর্ডটা আমার হয়েছে। অসাধারণ এক মুহূর্ত এটা।’
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার এটি পঞ্চম জয়। সঙ্গে তিন ড্রয়ে আট ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে তারা।#