দ্বিতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাবনার সুজানগরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল ৬ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে উপজেলার সিন্দুরি বরুরিয়া গ্রামে এ হামলার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ইউনুস আলী, সেলিম শেখ, মহির উদ্দিন, শেফালী খাতুন, হাসিনা খাতুন, সুফিয়া খাতুনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীন চৌধুরী। আর মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৈয়ব আলী শেখ।
গত কয়েক দিন ধরেই এই দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। শনিবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈয়ব আলী শেখের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেলে। আহত হন অন্তত ৭ জন।
এ বিষয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী তৈয়ব আলী শেখ অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন চৌধুরীর নির্দেশে তাঁর সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে হামলা চালিয়েছে। তাঁর নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। বসতবাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে। তিনি প্রাণভয়ে পালিয়েছিলেন। পরে প্রতিবেশীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে তৈয়ব আলী বলেন, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে শাহীন চৌধুরী তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। একই দিনদুপুরেও উপজেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলা চালিয়ে তাঁর দুই সমর্থককে মারধর করেছে। নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমি শঙ্কিত। প্রশাসনের কাছে দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হোক। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন বলেন জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন চৌধুরী বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচারণার মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থী তৈয়ব আলীর সমর্থকের হামলা চালিয়েছে, গুলিবর্ষণ করেছে। এখন উল্টো আমার নামেই মিথ্যা বলছে। নির্বাচনে নিজের পক্ষে সমর্থন নেওয়ার জন্য তাঁরা নিজেরাই এই কাজ করেছে। আমার বা আমার কোন নেতা-কর্মী এই কাজ করেনি। আমরা নিজেদের মত করে প্রচারণা চালাচ্ছি। নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কোন নেতা-কর্মী বা সমর্থক নেই। জামাত বিএনপির মদদে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবে।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগের আলোকে তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন প্রকারের সহিংসতা, আইন শৃঙ্খলার অবনতি মেনে নেওয়া হবে না। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন।