ভোঁদড় সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৬ই মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব ভোঁদড় দিবস’।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রকৃতি বিষয়ক সংগঠন ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব (NSCC) প্রযুক্তির সহায়তায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ২৬ই মে বুধবার অনলাইনে দিবসটিকে পালন করেছে।
বিশ্ব ভোঁদড় দিবস উপলক্ষে সংগঠনটি আয়োজন করেছিল স্কুল পর্যায়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক পোস্টার প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা ৭ টায় অনলাইন মাধ্যম জুমে আয়োজন করা হয় ভোঁদড়ের উপর বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ এন্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের সম্মানিত ডীন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
ভোঁদড়ের ওপর বিশেষ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শ্রীমান দিলীপ কুমার দাশ, সহকারী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রেস ইয়োকসন, ডিরেক্টর, আন্তর্জাতিক ভোঁদড় সংরক্ষণ ফান্ড, যুক্তরাজ্য, অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল হাসান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. হাবিবুন নাহার, সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভোঁদড় দিবস নিয়ে ক্লাবের অতীত কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করা হয়। শ্রীমান দিলীপ কুমার দাশ তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভোঁদড় জলাভূমির ও নদীর স্বাস্থ্য নির্দেশক। স্বাস্থ্যকর জলাভূমি ও নদীতেই কেবল ভোঁদড় টিকে থাকতে পারে।ভোঁদড় রক্ষা করতে হলে আমাদের ক্ষয়িষ্ণু জলাভূমির স্বাস্থ্য ঠিক করতে হবে। মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রাচুর্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যেহুতু স্বাস্থ্যকর জলাভূমি ও পরিবেশ মানুষের জন্য সমভাবে প্রয়োজন, তাই আমাদের নিজেদের সুস্বাস্থ্য ও জীবীকার প্রয়োজনে ভোঁদড় রক্ষায় সরকার ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক ভোঁদড় সংরক্ষণ ফান্ড এর ডিরেক্টর গ্রেস ইয়োকসন তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে প্রায় সকল প্রাণীই বিলুপ্তির পথে। ভোঁদড়ও এর ব্যতিক্রম নয় । আর কিছু মানুষ মনে করে ভোঁদড়ের তৈলাক্ত চামড়ার অনেক দাম, তাই তারা লোভে এদের নির্বিচারে হত্যা করছে। আবাসভূমি ধ্বংস ও পরিবর্তনই এদের কমে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ। এতে জীব-জগতের অন্যতম সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় প্রাণী ভোঁদড় হারিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ভোঁদড় রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি ভোঁদড় সংরক্ষণে গবেষণার অপর গুরুত্ব দিতে বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন,” ভোঁদড় সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ার এখনি সময়। “ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরার পেশা চলে আসছে বংশানুক্রমে ৷ বলা হয়ে থাকে, ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরার এ পদ্ধতি ৩০০ বছরের পুরনো ৷ ভোঁদর রক্ষার পাশাপাশি জেলেদের এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে । এতে ভোঁদড় ও যেমন সংরক্ষিত হবে আমাদের ঐতিহ্য ও টিকে থাকবে। পাশাপাশি এধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশের ভোঁদড়ের অপর বিশেষ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এর সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহার বাংলাদেশে প্রাপ্ত ভোঁদড়ের প্রজাতি গুলো এবং বাংলাদেশে এদের বিচরণক্ষেত্র সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। অপর আলোচক বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভগের অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল হাসান বাংলাদেশের ভোঁদড়ের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের ভোঁদড় সম্পর্কিত গবেষণা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন।
আলোচনায় বাংলাদেশের শিক্ষাবাবস্থায় বিশেষকরে প্রাথমিক স্তরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের গুরুত্ব, ভোঁদড় তথা বাংলাদেশের বিপন্নপ্রায় প্রানিদেরকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে সবাই একমত হন।
উল্লেখ্য, বিশ্ব ভোঁদড় দিবস ২০২১ উপলক্ষে ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাবের (NSCC) আয়োজিত ইভেন্টটি আন্তর্জাতিক ভোঁদড় সংরক্ষণ ফান্ড/সংস্থার (IOSF) সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে যুক্ত হয়েছে।
দৈনিক সত্যের সকাল – নাজমুল হোসেন (জবি)