রাস্টার গ্রাফিক্স কি এবং ভেক্টর গ্রাফিক্স কি? রাস্টার ও ভেক্টর গ্রাফিক্স এর পার্থক্য কি? কখন কোনটি প্রয়োজন?
কম্পিউটারে ছবি আঁকা বা ছবি তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হয় কম্পিউটার গ্রাফিক্স। আর এ কম্পিউটার গ্রাফিক্স হতে পারে রাস্টার অথবা ভেক্টর। ছবির গুণগত মান, কাজের ধরন এবং কম্পিউটার মেমোরি এসব ফ্যাক্টর বিবেচনায় গ্রাফিক্স এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রাস্টার এবং ভেক্টর গ্রাফিক্সের পার্থক্যকারী বিষয়গুলো আজকে আমরা আলোচনা করবো এবং সেই সাথে জানাব রাস্টার এবং ভেক্টর গ্রাফিক্সের কোন গ্রাফিক্স আপনি কখন ব্যবহার করবেন।
রাস্টার গ্রাফিক্স কি?
রাস্টার গ্রাফিক্স হলো :- রাস্টার গ্রাফিক্স যাকে বিটম্যাপ গ্রাফিক্সও বলা হয়। এমন ডিজিটাল চিত্র যা ছোট আয়তক্ষেত্রাকার পিক্সেল বা চিত্র উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত হয়, যা গ্রিডে বা x এবং y স্থানাঙ্কের রাস্টার দ্বারা সজ্জিত হয় (3 ডি ক্ষেত্রে অ্যাজ সমন্বয় অন্তর্ভুক্ত) এমনভাবে এটি একটি ইমেজ গঠন।
একটি রাস্টার গ্রাফিক্স ছবি, বা ডিজিটাল ছবি, বা বিটম্যাপ হল এক ধরনের উপাত্ত ফাইল বা সংগঠন যাতে সাধারণত কম্পিউটার মনিটর, কাগজ বা অন্য কোন পর্দায় প্রদর্শনযোগ্য পিক্সেল বা রঙবিন্দুর আয়তাকার গ্রিড-সংক্রান্ত তথ্য রক্ষিত থাকে। প্রতিটি পিক্সেলের রঙ আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত হয়।
রাস্টার গ্রাফিক্স রাস্টার গ্রাফিক্স এর ছবিগুলো পিক্সেল বেজড প্রোগ্রাম দিয়ে নির্মিত। আমরা ক্যামেরা বা স্ক্যানার থেকে যে ছবিগুলো পাই সেগুলো রাস্টার গ্রাফিক্স।
যখন আপনি একটি রাস্টার প্রোগ্রাম ব্যবহার করবেন তখন আপনি ঠিক কাগজে পেইন্ট করার কাজটাই করে থাকেন যেমন, কাগজে ছবি আঁকার সময় একটি পেইন্টিং ব্রাশ কে রঙের মধ্যে ডোবানো হয়। রাস্টার ইমেজে এক রঙ থেকে আরেক রঙে রূপান্তরের জন্য রঙের সংমিশ্রণ খুব সহজেই করা যায়। কম্পিউটার গ্রাফিক্স এর প্রথমদিকে ব্যবহৃত গ্রাফিক্স হচ্ছে রাস্টার গ্রাফিক্স। অসংখ্য পিক্সেল বা বিটম্যাপ নিয়ে রাস্টার ইমেজ তৈরী হয় ফলে ফাইল সাইজ বড় হয়। এতে ছবির রঙের ভিন্নতা থাকলেও জুম করে বা কাছে থেকে দেখলে ছবির কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায় বা ছবি অস্পষ্ট দেখায়। কমন কিছু রাস্টার গ্রাফিক্স পিকচার বা ইমেজ ফরম্যাট হচ্ছে, Jpg, gif, png
আরো দেখুনঃ ফেসবুক প্রটেক্ট কি, ফেসবুক প্রটেক্ট চালু করার নিয়ম, কেন চালু করতে হবে?
রাস্টার গ্রাফিক্সের বৈশিষ্ট কি?
রাস্টার গ্রাফিক্সের বৈশিষ্ট হলোঃ
- রাস্টার মূলত পিক্সেল দ্বারা গঠিত হয়।
- রোজোলিউশন এবং ডাইমেনশনের উপর এর কোয়ালিটি নির্ভর করে।
- বিটম্যাপের জন্য সাধারণত এর ফাইল সাইজ ভেক্টর গ্রাফিক্স থেকে তুলনামূলক ভারি হয়ে থাকে।
- রাস্টার গ্রাফিক্সের সাধারন ফাইল ফরম্যাট হচ্ছে .JPG .GIF .PNG .TIFF ইত্যাদি।
- রাস্টার সফটওয়্যার হলো- ফটোশপ (Photoshop), GIMP ইত্যাদি।
ভেক্টর গ্রাফিক্স কি?
ভেক্টর গ্রাফিক্স হলো :- গাণিতিক রেখা এবং বক্ররেখার মাধ্যমে তৈরি গ্রাফিক্সকে ভেক্টর গ্রাফিক্স বলা হয়। ভেক্টর গ্রাফিক্স হচ্ছে জ্যামিতিক প্রিমিটিভ যেমন বিন্দু, রেখা, বক্ররেখা, বহুভুজ, ইত্যাদির গাণিতিক সমীকরণ ব্যবহার করে কম্পিউটার গ্রাফিক্স এর ছবি উপস্থাপনের পদ্ধতি। এটি র্যাস্টার গ্ৰাফিক্সের চেয়ে ভিন্ন, যেখানে ছবিকে পিক্সেলের সমষ্টি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভেক্টর গ্রাফিক্স বর্ণিত হয়। তাই এটিকে স্থানান্তর, সাইজ পরিবর্তন অথবা রং পরিবর্তন করলেও গ্রাফিক্সের মানের কোন পরিবর্তন হয় না। এক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রতিটি বিটের অবস্থান এবং রংয়ের মানকে ধারণ করার পরিবর্তে ছবির প্রতিটি রেখা বা বৃত্তের গাণিতিক সূত্রে ধারণ করে। ফলে ভেক্টর ছবির মান বেশ ভালো হওয়া সত্ত্বেও বাইট সংখ্যা অত্যন্ত কম হয়ে থাকে।
ভেক্টর গ্রাফিক্সের রেজ্যুলেশন সবসময় সব অবস্থায় একই থাকে। তাই এটিকে যেকোনো সাইজে পরিবর্তন করা যায় এবং পরিস্কারভাবে যেকোনো আউটপুট ডিভাইসে প্রিন্ট করা যায়। টাইপ বিশেষ করে ছোট টাইপ তৈরি করার জন্য ভেক্টর গ্রাফিক্স বেশি ব্যবহার করা হয়। বিখ্যাত গ্রাফিক্স সফটওয়্যার নির্মাতা এডোবি ইন কর্পোরেশনের এডোবি ইলাষ্ট্রেটর সফটওয়্যার দিয়ে ভেক্টর গ্রাফিক্স তৈরি করা যায়।
কম্পিউটারের পর্দায় যে ছবি প্রদর্শিত হয় তা তৈরি হয় পিক্সেল নামক ছোট ছোট চতুর্ভূজ কোষকে ছকে সাজিয়ে। পিক্সেল শব্দটি আসে Picture element যার অর্থ ছবির উপাদান। এই কোষ গুলোকে সাজিয়েই তৈরি হয় একটি ছবি। কোষগুলো যত ক্ষুদ্র ও বেশিসংখ্যক হয়, ছবির মান বা রেজোল্যুশন তত বেশি ভালো হয়। কিন্তু এত বেশি ছবি-কোষ এর তথ্য ধারণ করতে ফাইলের সাইজও তত বেশি হয়। অবশ্য, আধুনিক উপাত্ত সংরক্ষণের মাধ্যম গুলো গিগাবাইট থেকে টেরাবাইট পর্যন্ত তথ্য ধারণ করতে সক্ষম, ফলে ফাইল সাইজ সীমিত রাখার জন্য ছবির মান নিয়ে আপোস না করলেও চলে।
ভেক্টর গ্রাফিক্সের বৈশিষ্ট কি?
- ভেক্টর মূলত পাথের উপর নির্ভর করে গঠিত।
- পুরো ফরম্যাট যেহেতু পাথের উপর নির্ভরশীল তাই এর কোয়ালিটি ডাইমেনশনের উপর নির্ভরশীল না।
- বিটম্যাপের পরিবর্তে পাথ দিয়ে তৈরি হওয়ায় এর ফাইল সাইজ সাধারনত ছোট হয়।
- ভেক্টর গ্রাফিক্সের সাধারন ফাইল ফরম্যাট হচ্ছে .PDF .EPS .AI .SVG ইত্যাদি।
রাস্টার গ্রাফিক্স ও ভেক্টর গ্রাফিক্স এর মধ্যে পার্থক্য
রাস্টার গ্রাফিক্স ও ভেক্টর গ্রাফিক্স এর মধ্যে পার্থক্যঃ
- রাস্টার গ্রাফিক্স
- রাস্টার গ্রাফিক্স তৈরী হয় পিক্সেল এর উপর নির্ভর করে।
- রাস্টার গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হয় ফটো এডিটিং, অবিরাম অবিচ্ছিন্ন ছবির সাথে রঙের মিশ্রণ নির্ভর ছবি তৈরীতে।
- রাস্টার গ্রাফিক্স এর কোয়ালিটি মেইনটেইন হয় রেজুলেশন এবং ডাইমেনশন দ্বারা।
- রাস্টার গ্রাফিক্স যেকোনো কালার মিশ্রণ ঘটিয়ে ইমেজ তৈরী করতে সক্ষম।
- রাস্টার গ্রাফিক্স এর অসংখ্য বিটম্যাপের জন্য এর ফাইল সাইজ বড় হয় এবং কম্পিউটার মেমোরিতে বেশি জায়গা দখল করে।
- রাস্টার গ্রাফিক্স পেইন্টিং এর জন্য উপযোগী।
- রাস্টার গ্রাফিক্স এ খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- রাস্টার ইমেজ কে ভেক্টর ইমেজ এ রূপান্তর করা একটি জটিল ও কঠিন প্রক্রিয়া।
- রাস্টার গ্রাফিক্স এর ফাইল টাইপ হচ্ছে- Jpg, gif, png, bmp ইত্যাদি।
রাস্টার সফটওয়্যার হলো- ফটোশপ (Photoshop), GIMP ইত্যাদি।
ভেক্টর গ্রাফিক্স
- নির্দিষ্ট লাইন বা রেখার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়।
- বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক লোগো, ড্রয়িং, বিলবোর্ড, ব্যানার, ইলাস্ট্রেশন তৈরীতে ভেক্টর গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হয়।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যাপকতা হলো অসীম আকার পরিবর্তনযোগ্যতা (Scalable)।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স এ রাস্টার গ্রাফিক্স এর সাহায্য ছাড়া কালার ব্লেন্ডস বা মিশ্রণ ইমেজ তৈরী সম্ভব নয়।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ফাইল সাইজ ছোট, কারণ এটা লাইন বা রেখার সাহায্যে গাণিতিক ফর্মুলা ব্যবহার করে কাজ করে।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যবহার হচ্ছে এটা ড্রয়িং এর জন্য উপযোগী।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স এ রাস্টার গ্রাফিক্স এর তুলনায় খরচ বেশি হয়।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স কে সহজেই রাস্টার গ্রাফিক্স এ রূপান্তর করা যায়।
- ভেক্টর গ্রাফিক্স ফাইল টাইপগুলো হলো- SVG, CDR, Al, pdf ইত্যাদি।
ভেক্টর গ্রাফিক্স সফটওয়্যার হলো- অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর (Adobe Illustrators), Corel draw, Inkscape ইত্যাদি।
সহজ কথায় আপনি যদি এমন কোন ডিজাইন তৈরি করতে চান যা অনেক জুম করে দেখার/প্রিন্ট করার প্রয়োজন আছে যেমন লোগো, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভেক্টর গ্রাফিক্স ব্যবহার করবেন। আর আপনি যদি এমন কোন ডিজাইন তৈরি করতে চান যা জুম করে দেখার/প্রিন্ট করার প্রয়োজন নেই যেমন বিজনেস কার্ড, ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বা কাভার ফটো ইত্যাদির ক্ষেত্রে রাস্টার গ্রাফিক্স ব্যবহার করবেন।
আজকের লেখাটা থেকে আপনি জানতে পারলেন ভেক্টর গ্রাফিক্স এবং রাস্টার গ্রাফিক্স সম্পর্কে। আসলে দুইটা গ্রাফিক্সই সমান গুরুত্ববহন করে না। তাই প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী যেকোনো গ্রাফিক্সই আপনি ব্যবহার করতে পারেন।