বাংলাদেশের আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সহসাই প্রত্যাহার হচ্ছে না বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। আজ (বুধবার) জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব, আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে মার্কিন সরকার।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মাত্র গতকালই বলেছেন, “গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে ব্যাটালিয়ন- র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে না নেওয়ার জন্য ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যে চিঠি দিয়েছে এতে কোনো প্রভাব পড়বে না। এর আগে গত মাসে র্যাবের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জারী করা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছিলেন, এটা এ দেশের জনগণ গ্রহণ করেনি।
এ অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ জাতীয় সংসদে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার র্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অপপ্রচারের কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। র্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন লবিস্ট প্রতিষ্ঠান, আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান…. তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনা প্রকাশ করেনি, সেই সঙ্গে পৃথিবীর বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে তাদেরকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করেছে- যে ‘র্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত ও সরকারের লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে বিবৃতি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন, বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে প্রশ্রয় দেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ গুড গভার্নেন্সের জন্য এবং দেশের পজিটিভ ইমেজগুলো তুলে ধরার জন্য পি আর (জনন-সংযোগ) ফার্ম নিয়োগ করেছে বলেও আজ সংসদে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একটি প্রদর্শনী’ উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে, বিএনপি অনেকগুলো লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এটা খুবই অন্যায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের ক্ষতি করা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে গতকাল বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা যা কিছু করি দেশকে রক্ষার জন্য করি। তার মানে এই নয় দেশকে রক্ষার জন্য আমরা লবিস্ট নিয়োগ করেছি। আবারও বলছি, আমরা যা কিছু করি, দেশকে রক্ষার জন্য করি, দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য করি। আমরা লবিস্ট নিয়োগ করেছি- এটা একেবারে সঠিক না।’
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমাদের র্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেরোরিস্ট অর্গানাইশেন হিসেবে বিবেচিত হবে, বরং টেরোরিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র্যাবের কারণেই হলি আর্টিজানের পর থেকেই… স্বয়ং আমেরিকার স্ট্রেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে- বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এরকম দেশ যেখানে সন্ত্রাসবাদ একটা সময় খুব উত্তপ্ত ছিল, সেই সন্ত্রাসী তৎপরতাও এখন কমেছে।#