28 C
Dhaka
Sunday, March 26, 2023

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিতর্ক : সবপক্ষের শুভবুদ্ধিই কাম্য

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের দাবি, মার্চের মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে হবে এবং স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলো দ্রুত শুরু করতে হবে। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।

চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে আন্দোলনকারীরা পড়েছেন পুলিশি বাধার মুখে। কয়েকটি স্থানে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, এতে আহত হয়েছেন বেশকিছু শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ সময় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন, তবে দাবি আদায় না হলে পুনরায় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ মার্চ খুলবে কী খুলবে না-সেই সিদ্ধান্ত আজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

বলা নিষ্প্রোয়জন, গত প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাকাল চলছে। বস্তুত গত মার্চ থেকে জাতি বেশ কয়েক মাস মহা আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছিল। করোনা আতঙ্কে অফিস-আদালত, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের প্রায় সব সেক্টরই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

অবশ্য পরে দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনায় রেখে ধীরে ধীরে সবই খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ প্রায় এক বছর বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তাদের পড়ালেখার কার্যক্রমই শুধু বন্ধ থাকেনি, পরীক্ষাগুলোও নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এ অবস্থায় তারা সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে পারছেন না।

সবদিক বিবেচনা করে সরকার আগামী ঈদুল ফিতরের পর অর্থাৎ মে মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তারা দ্রুতই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার এবং স্থগিত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছেন এবং সেই দাবিতে নেমেছেন আন্দোলনে।

এটা ঠিক, ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বেশ ভালো। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার দুটোই কমে এসেছে, বলা যায় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই মুহূর্তেই খুলে দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা একটি বিতর্কসাপেক্ষ বিষয় বটে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আমাদের কোনো ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পরিস্থিতি যেন খারাপের দিকে না যায় এবং করোনা মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য যেন ম্লান হয়ে না পড়ে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, আর মাত্র তিনটি মাস, এ সময়টা আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই। শিক্ষামন্ত্রীর এ উপলব্ধির সঙ্গে দ্বিমত করার কিছু নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলাসাপেক্ষে সময়টা আরও এগিয়ে নেওয়া যায় কি না, শিক্ষামন্ত্রী তা ভেবে দেখতে পারেন বইকি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেশের সবকিছুই যখন খুলে দেওয়া হয়েছে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে-এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমরা মনে করি, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন না করে ছাত্র প্রতিনিধিরা সরকার পক্ষের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনায় বসতে পারেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ দেশের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদরাও তাদের মতামত দিতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখনই খুলে দেওয়া হোক না কেন, স্থগিত পরীক্ষাগুলো যখনই গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শুভবুদ্ধি কামনা করছি।

সূত্র:- দৈনিক শিক্ষা।

এম. এস. মাহামুদ / সত্যের সকাল।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Leave a Reply

লেখক থেকে আরো