ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে ক্যারিয়ারে ৮০০ গোলের অনবদ্য কীর্তি গড়লেন পর্তুগাল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পেলেসহ সব কিংবদন্তি ফুটবলারকে ছাড়িয়ে নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। তার রেকর্ড গড়ার দিনে ইপিএলে আর্সেনালকে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
১০৯৭ ম্যাচে ৮০১ গোল, এই পরিসংখ্যানটা একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার গোলসংখ্যা। বিস্ময়ে অভিভূত করার মতোই এই পরিসংখ্যান। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে জানা থাকলে অবশ্য তা মনে হবে না। অসম্ভবকে সম্ভব করাই তো রোনালদোর মতো খেলোয়াড়দের বিশেষত্ব, এ জন্যই তাঁরা কিংবদন্তি।
অদম্য, অসাধারণ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বয়স কেবলই একটি সংখ্যামাত্র এর বাস্তব উদাহরণ পর্তুগিজ এই সুপারস্টার। বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, একের পর এক গড়ে চলেছেন নতুন রূপকথা, ভাঙছেন রেকর্ড।
পেলে-রোমারিওদের মত কিংবদন্তি ফুটবলারকে আগেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। এককভাবে ছিলেন শীর্ষে। মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে থেকেও, চেলসির বিপক্ষে, মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। ভারপ্রাপ্ত কোচ মাইকেল ক্যারিকের বিদায়ী ম্যাচে যেন, সেই আক্ষেপকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করলেন সি আর সেভেন।
কাল রাতে পর্তুগিজ কিংবদন্তি এই ৮০০ গোলের মাইলফলকেরই দেখা পেলেন। আর্সেনাল নেমেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে, তাদেরই মাঠে। স্বাগতিকদের ৩-২ গোলের জয়ে জোড়া গোল রোনালদোর। এর মধ্যে প্রথম গোলটি করে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারে ৮০০তম গোলে দেখা পেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা।
ইউনাইটেডে দুই স্পেলে এ নিয়ে ১৩০ গোল করলেন রোনালদো। প্রথম মেয়াদে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটিতে আসার আগে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে করেন ৫ গোল। ৪৫০ গোল করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে।
জুভেন্টাসের হয়ে ১০১ গোল এবং ১১৫ গোল করেছেন পর্তুগালের হয়ে। ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবল, চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রোনালদোই সর্বোচ্চ গোলদাতা।
ফুটবলে অফিশিয়াল ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতা নিরঙ্কুশভাবে বেছে নিতে শুরু থেকে সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করা না হলেও রোনালদোই যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। চেক কিংবদন্তি জোসেফ বাইকানের গোলসংখ্যা কোথাও ৮২১, কোথাও আবার ৮০৫।
তবে এর মধ্যে রিজার্ভ দলের হয়ে করা গোল এবং আন-অফিশিয়াল ম্যাচও রয়েছে। ব্রাজিলের দুই কিংবদন্তি পেলে ও রোমারিও নিজেদের ক্যারিয়ারে গোলসংখ্যা অন্তত ১০০০ বলে দাবি করেন। কিন্তু শুধু অফিশিয়াল প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হিসেব করলে তাঁদের গোলসংখ্যা সাতশ তে নেমে আসে।
রোনালদো ক্যারিয়ারে সেরা মৌসুমের দেখা পেয়েছেন রিয়ালের জার্সিতে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৪ ম্যাচে ৬১ গোল করেছিলেন রোনালদো। সেভিয়া তাঁর প্রিয় প্রতিপক্ষ ২৭ গোল করেছেন ১৮ ম্যাচ খেলে।
২০১৫ সালে গ্রানাদা ও এস্পানিওলের বিপক্ষে এক ম্যাচে একাই পাঁচটি করে গোলও করেছেন রোনালদো।
তাঁর ক্যারিয়ারে ৮০০ গোলের এ মাইলফলক ছোঁয়া কত কঠিন, তা বুঝিয়ে দেবে একটি হিসেব টানা ২০ মৌসুমে ৪০টি করে গোল করলে এই মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব। মেসি-রোনালদোর বাইরে হিসেব করলে টানা চার-পাঁচ মৌসুম উত্তুঙ্গ ফর্মের খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়াই তো কঠিন, সেখানে টানা ২০ মৌসুম! এর সঙ্গে যোগ করুন ২২৯টি অ্যাসিস্ট ও ৩৪টি শিরোপা।
রোনালদোর করা এই ৮০১ গোলের মধ্যে ৫১০টি এসেছে ডান পায়ে, ১৪৯ গোল বাঁ পায়ে, হেডে ১৪০টি এবং শরীরের অন্য জায়গা থেকে এসেছে বাকি ২ গোল।
ফুটবল পরিসংখ্যানের আন্তর্জাতিক সংস্থা আরএসএসএসএফের মতে, ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ গোলসংখ্যায় রোনালদোর নিকটতম পেলে (৭৬৯), রোমারিও (৭৬১) ও ফেরেঙ্ক পুসকাস (৭৬১)। ৭৫৬ গোল নিয়ে তারপরই লিওনেল মেসি।
অন্তত পাঁচটি দলের বিপক্ষে ন্যূনতম ২০টি করে গোল করেছেন রোনালদো। সবগুলোই স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া (২৭), আতলেতিকো মাদ্রিদ (২৫), হেতাফে (২৩), বার্সেলোনা (২০) ও সেল্টা ভিগো (২০)। ১৯টি দলের বিপক্ষে নিজের গোলসংখ্যা দুই অঙ্কে উন্নীত করেছেন রোনালদো। আর্সেনালের বিপক্ষে কাল রাতে পেয়েছেন নিজের ৮ম গোল।
গত সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় মেয়াদে ইউনাইটেডে ফেরার পর থেকে এই নিয়ে লিগে তার গোল হলো ৬টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সংখ্যাটা ১২।
মিনহাজুল ইসলাম/দৈনিক সত্যের সকাল